ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিবেশ দূষণের বিষয়টি সমগ্র বিশ্বেই এখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় । সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য ও সেবার যোগান দিয়ে চলেছে ব্যবসায়। মানুষের ভোগের প্রবণতা বাড়ায় শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ব্যাপক হারে। নানান ধরনের সেবা শিল্পের দ্রুত বিস্তৃতি ঘটছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা । কত কম খরচে পণ্য উৎপাদন করে বাজার দখল করা যায়-এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা। কিন্তু তার এ কাজ পরিবেশের ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এটা বোঝার কোনো সময় ও সুযোগ তার নেই । বাংলাদেশে বর্জ্য শোধন যন্ত্র (Effluent Treatment Plant /ETP) প্রতিষ্ঠা ছাড়া শিল্প অনুমোদন না দেয়ার বিধান থাকলেও তা কতটা মানা হচ্ছে তা দেখার যেন কেউ নেই । এভাবেই সবার চোখের সামনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো নানানভাবে পরিবেশ দূষণ করে চলছে । নিয়ে ব্যবসায় কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের দূষণ সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো;
১. শব্দ দূষণ (Sound pollution) : পারিপার্শ্বিকতায় শব্দ ও কোলাহল বেড়ে যাওয়ার কারণে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে যে অস্বাভাবিকতার জন্ম নেয় তাকে শব্দ দূষণ বলে। শান্ত ও নিরিবলি পরিবেশ মানুষসহ সকল সৃষ্টিকূলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ । ব্যবসায়ের উন্নয়ন এবং বাজার ও শহর সৃষ্টি শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। উড়োজাহাজ উঠছে ও নামছে এতে শব্দ দূষণ ঘটছে। রেলগাড়ি, বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহন শব্দ দূষণের কারণ । গাড়ির হর্ণ ঢাকা শহরে অসহ্য । মেশিনের শব্দ, বুলডোজার ও ড্রিলের শব্দ, নির্মাণ কাজ ইত্যাদি নানান কাজে শব্দ দূষণ ঘটছে । গ্রামের বাজারে উচ্চ আওয়াজে দোকানে সিডি বাজছে, মাইকিং হচ্ছে- এগুলোও শ দূষণের কারণ হিসেবে গণ্য ।
২. পানি দূষণ (Water pollution) : পানির স্বাভাবিকতায় প্রাণীজগত ও সৃষ্টিকূলের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকরণের কাজকেই পানি দূষণ বলে । পানির অপর নাম জীবন। পানি তার স্বাভাবিকতা হারালে প্রাণীজগত ও সৃষ্টিকূলের জন্য তা কতটা বিপর্যয়কর হতে পারে ঢাকার আশে পাশের নদীগুলো দেখলেই আমরা তা বুঝতে পারি। সৃষ্টিতে পানির অপরিহার্যতার কারণেই সৃষ্টিকর্তা হয়তোবা তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল সৃষ্টি করেছেন। মানুষের জীবন ধারণ ও কর্মকাণ্ডের প্রতিটা মুহূর্তেই পানির যে প্রয়োজন তা আমাদের সবার নিকট দৃশ্যমান। অথচ এই পানিতে হাড়ি-বাসন ধোয়া, কাপড়-চোপড় ধুয়ে ক্ষার পানিতে ছেড়ে দেয়াসহ অসংখ্য পানি দূষণের কাজ হচ্ছে। শিল্পবর্জ্য, পয়ঃময়লা যখন নির্দ্বিধায় পানিতে ছেড়ে দেয়া হয় তখন ঐ পানি মানুষের জন্য আর উপকারী থাকে না। নদীতে ও সমুদ্রে জলযান চলছে। তৈল, ময়লাসহ নানান আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পানিতে। তৈল ট্যাংকার ফেটে ও খনি থেকে তৈল নির্গত হচ্ছে পানিতে। এতে পানি তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। এভাবেই ব্যবসায় কর্মকাণ্ড পানি দুষম বিরূপ ভূমিকা রাখছে।
৩. বায়ু দূষণ (Air pollution) : স্বাভাবিক উপাদানের বাইরে বায়ুতে যখন নানান ধরনের ধুয়া, গ্যাস, ধুল বালি, সিসাসহ নানান খারাপ উপাদান যুক্ত হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে। মানুষ ও প্রাণীজগতের সুস্থ র স্বাভাবিক বেঁচে থাকার জন্য নির্মল বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । গাছপালাও তার প্রয়োজনীয় উপাদান নিচ্ছে বায়ু থেকে । কিন্তু ব্যবসায় আজ এই নির্মল বায়ু থেকেও মানুষকে বঞ্চিত করছে । ঢাকা শহরের কথাই যদি ধরা হয় তবে পরিবহণের গাড়িগুলো প্রতিদিন যে পরিমাণ ধুয়া ছড়াচ্ছে তাতে ঢাকার বাতাস দুষিত হচ্ছে। ইটের ভাটা আমাদের দেশের বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। শিল্প কারখানার ধুয়া, ধুলা-বালি, পরিবহণের ধুয়া থেকে নির্গত সিসা ইত্যাদি বায়ু দূষণ করছে। জুম চাষের জন্য বন পোড়ানো হচ্ছে, দাবানল সৃষ্টি হচ্ছে এতেও বায়ু দূষণ ঘটছে ।
৪. মাটি দূষণ (Soil pollution): উর্বর মাটি যখন নানান খারাপ উপাদানযুক্ত হয়ে তার স্বাভাবিকতা হারায় তখন তাকে মাটি দূষণ বলে। আবহমান কাল থেকে এই মাটি মানুষের খাদ্য যোগানে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গাছ-পালা, ফল-মূল সবই এই মাটি থেকে সৃষ্ট। কিন্তু এই মাটিও আজকে ব্যবসায় কর্মকাণ্ডের কারণে দূষণের অসহায় শিকার। কৃষি ফার্মগুলো অতিরিক্ত সার আর কীটনাশক ব্যবহার করে মাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিল্পব জমিতে ফেলে মাটির ক্ষতি করা হচ্ছে। ইটের ভাটার টুকরো ইট মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করছে। খনি থেকে সম্পদ আহরণের ফলে জমি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি এ সকল খনিজ পদার্থ মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। ভূগর্ভস্থ পানি অধিক মাত্রায় উঠিয়ে ফেলার কারণে মাটির শুষ্কতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচ দিয়ে যখন বিদ্যুত, গ্যাসসহ নানান সংযোগ লাইন টানা হচ্ছে তাতেও মাটি তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে।